Irrfan Khan
(1967-2020)
গত ২৯শে এপ্রিল বলিউডের অন্যতম বলিষ্ঠ অভিনেতা ইরফান খান পরলোকগত হয়েছেন। ৫৩ বছর বয়সি এই অভিনেতা বেশ কয়েকবছর ধরে নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারে ভুগছিলেন। তিনি একজন উঁচুদরের অভিনেতাই ছিলেন না, অসাধারন মনের মানুষও ঞ্ছিলেন। দর্শকরা সাধারণত ফিল্মস্টারদের পর্দার জীবনই দেখে থাকেন। তাদের ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজ বেশী মানুষ রাখেন না। যদিও বেশীরভাগ স্টারদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে তেমন কিছু শেখারও থাকে না। এ বিষয়ে ইরফান খান ছিলেন ব্যতিক্রম। পর্দায় তিনি অনেক নেগেটিভ চরিত্রে অভনয় করলেও বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ মানবিক। বেশীরভাগ মানুষ যেমন ব্যক্তিগত জীবনে একদিকে যেমন মাছ, বিভিন্ন প্রাণীর মাংশ, ডিম, দুধ ইত্যাদি ভরপুর গ্রহণ করে অন্যদিকে মুখে ধর্মের কথা মানবতার কথা বলে বেড়ায়, ইরফান খান সেই দলের মানুষ ছিলেন না। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেও তিনি ছোটবেলা থেকেই নিরামিষাশী ছিলেন। পশুপাখি ও জীবজন্তুদের ভালোবাসতেন। তার বাবার একসময় পশু শিকারের অভ্যেষ থাকলেও তিনি কখনো পশুপাখি শিকার করেননি। তার বাবা মজা করে বলতেন, মুসলিম পাঠান ঘরে ব্রাহ্মণ ছেলের জন্ম হয়েছে। বড় হয়ে ইরফান খান সনাতন সংস্কৃতিকে জেনে নিয়েছিলেন। তিনি যুবাবয়সেই নাকি মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতি রচিত বিখ্যাত পুস্তক ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ পড়ে ফেলেছিলেন। পতঞ্জলি যোগ পীঠের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। হিন্দু মেয়ে সুতপা শিকদারকে বিয়ে করেছেন, যিনি দিল্লীতে ন্যশনাল স্কুল অফ দ্রামাতে পড়ার সময় সহপাঠিনী ছিলেন। সাধারণত ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিবাহ হলে যে শোরগোল উঠে থাকে ইরফান খান ও সুতপা শিকদারের ক্ষেত্রে তা হয়নি। মানবিক জীবন ও মূল্যবোধই ছিল তার কাছে প্রধান। টিভির একটি ডিবেটের ভিডিও আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে যেখানে ধর্ম নিয়ে ইরফান খান নিজের যুক্তি মৌলবিদের শোনাচ্ছেন। এমনকি ২০১৬ সালে ইরফান খান তার নামের খান সারনেম ত্যাগ করেন। নামের বানানটি আগেই কিছুটা পাল্টেছিলেন। তিনি বলতেন লোকে আমায় নামে চিনুক টাইটেল দিয়ে নয়।
উদয়পুরে একটি ছবির শুটিং চলাকালীন ৪৫ দিন ড্রাইভার হিসেবে ছিলেন নরপত সিং। সাংবাদিক তার কাছে ইরফান খান সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নরপত সিং-এর কাছ থেকে ইরফান খানের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। খবরটি সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছিল। হোটেল থেকে বেরিয়ে শুটিয়ে যাবার আগে প্রতিদিন তিনি মহাদেবের মন্দিরে জল ঢেলে পূজা দিতেন। গোরুকে খাবার দিতেন, কুকুরদের রুটি দিতেন। নরপত সিং-এর পরিবারের সাথেও ইরফান খানের একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সে ইরফান খানকে নিয়মিত কীটনাশকমুক্ত খাদ্যদ্রব্য পাঠাতেন।
মনুষ্যতের পরিচয় বাস্তব জীবনে পালন করেছেন ইরফান খান। স্বামী বিবেকানন্দও চাইতেন, মানুষ যুবাবস্থাতেই সমস্ত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গ্রন্থসমুহ অধ্যয়ন করুক। নিজের হাতে বই নিয়ে পড়লে তবেই নিজস্ব বিবেক চেতনা জাগ্রত হবে। নিজের যুক্তি তৈরি হবে। ভণ্ড ধার্মিকরা কখনই চাইবে না মানুষ ধর্মগ্রন্থ গুলো পড়ুক। সত্যাসত্য জেনে গেলে যুক্তি-তর্ক তৈরি হয়ে গেলে তো আর মগজধোলাই করা যায় না। মানুষ ধর্মগ্রন্থগুলো অতি যত্ন সহকারে আলমারিতে ভরে রাখে। তাই তো আসল মানবিকতাও চাপা পড়ে থাকে। ফিরে আসি ইরফান খানের কাছে। দিল্লিতে অভিনয়ের ডিগ্রী শেষ করে মুম্বই যান। প্রথম জীবনে একটি কোম্পানিতে এসি সারাইয়ের কাজও করেছেন। ১৯৮৮ সালের ‘Salaam Bombay!’ ছবিতে একটি ছোট্ট ছরিত্রের মাধ্যমে পর্দায় অভিনয়ের শুরু। বেশ কিছুকাল পর বলিউডে সফলতার যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালের Haasil (2003) ছবি দিয়ে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার, ফিল্মফেয়ারসহ অনেক সম্মান রয়েছে তার ঝুলিতে। তার বিখ্যাত হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে Maqbool (2004), The Namesake (2006), Life in a... Metro (2007), Paan Singh Tomar (2011),
The Lunchbox (2013), Piku (2015),
Talvar (2015), New York (2009), Haider (2014), Gunday (2014) অন্যতম। তার অভিনীত Hindi Medium (2017) ছবিটি দেশের অন্যতম সফল বাণিজ্যিক ছবি। তার অভিনীত শেষ ছবি ‘Angrezi Medium (2020)’ যা Hindi Medium ছবিটির সিক্যোয়েল।
আন্তর্জাতিক স্তরে ও হলিউডেও তিনি বেশ কয়েকটি ছবি করেছেন যার সবকটিই বিখ্যাত। যেমন The Warrior (2011), Slumdog Millionaire (2008), The Amazing
Spider-Man (2012), Life of Pi (2012), Jurassic World (2015), and Inferno (2016) ইত্যাদি।
*******